গর্ভকালে নারীদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে। এ সময়ে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের প্রয়োজন বিশেষ যত্ন। কিন্তু আমাদের দেশের বহু নারী এ যত্ন পাচ্ছেন না। এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বিলকিস বেগম চৌধুরীর সাক্ষাৎকার।
প্রশ্ন: গর্ভকালে নারীদের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। এ সময়ে কোন ধরনের খাবার বেশি খেতে হবে?
উত্তর: প্রথমেই মনে রাখতে হবে গর্ভাবস্থা হচ্ছে একজন নারীর স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া মাত্র। তবে যেহেতু এই সময়ে নারীর শরীরের ভেতরে আরেকটি মানবশিশু বেড়ে ওঠে এবং সেই শিশুটির খাবার জোগান মায়ের শরীর থেকেই হয়ে থাকে, এ জন্য মাকে সাধারণ সময়ের চেয়ে কিছুটা বেশি খাবার খেতে হবে। এ খাবারগুলো হবে প্রথমত সুষম খাবার। তবে যেহেতু এ অবস্থায় শরীরে লৌহ ও ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন আছে, তাই এ দুটি উপাদানসমৃদ্ধ খাবার বেশি খেতে হবে। যেমন: দুধ, ডিম, ছোট মাছ, শাকসবজি, কলা, কচুর শাক ও কচুর লতি, কাঁচকলা ও ফলমূল।
উত্তর: এ সময় কোন ধরনের খাবার খাওয়া বারণ? এমন কোনো খাবার কি আছে, যেটির ফলে গর্ভপাতের ঝুঁকি রয়েছে?
বিলকিস বেগম চৌধুরী: গর্ভকালে সাধারণভাবে কোনো খাবারকেই নিষিদ্ধ করা হয় না। খাবার যে ধরনের হোক না কেন, তাতে গর্ভপাতের ঝুঁকি থাকে না। কিন্তু কোনো খাবার যদি বাসি বা পচা হয়, তাতে জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে। এর ফলে ওই খাবার তখন গর্ভপাতের কারণ হয়ে উঠতে পারে। এ ছাড়া অতিরিক্ত রাসায়নিকযুক্ত খাবার যা স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে, এর ফলেও গর্ভপাত হতে পারে। কখনো কখনো মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার শরীরে নানাবিধ উপসর্গ তৈরি করে, যার কারণে গর্ভপাত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া বিশেষ কোনো খাবার, যার দ্বারা শরীরে বিষক্রিয়া হতে পারে, সেগুলো খেলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে। আমাদের দেশে একটি প্রচলিত বিশ্বাস রয়েছে যে আনারস বা আনারসজাতীয় ফল খেলে গর্ভপাত হতে পারে। এটি নিতান্তই একটি কুসংস্কার।
উত্তর: গর্ভাবস্থায় কোন ধরনের কাজ করা বারণ?
বিলকিস বেগম চৌধুরী: আগেই বলা হয়েছে গর্ভাবস্থা একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া। তাই স্বাভাবিক চলাফেরা বা শরীরে চাপ পড়ে না এমন কাজ করা যেতেই পারে। তবে ভারী কাজ, ভারী কিছু বহন বা উত্তোলন, পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে—এ ধরনের কাজ এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ, এ ধরনের কাজ করতে গিয়ে অন্তঃসত্ত্বা মা বা গর্ভের শিশু আহত হতে পারে।
প্রথম আলো: গর্ভাবস্থায় মানসিক নির্যাতনের ফলে মা ও শিশুর কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে?
বিলকিস বেগম চৌধুরী: মানসিক নির্যাতন সব সময়েই মানুষের দেহ ও মন—দুটোকেই প্রভাবিত করে। মানসিক কারণে শরীরে যে উপসর্গগুলো দেখা যায় সেগুলোকে মনোদৈহিক উপসর্গ ও রোগ বলা হয়। তাই গর্ভাবস্থায় মানসিক নির্যাতন সেই মায়ের শরীরে ও মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রে গর্ভপাত হতে পারে। আবার কখনো কখনো মানসিক চাপের কারণে অন্তঃসত্ত্বা নারীর রক্তক্ষরণ হতে পারে বা অকাল প্রসব হয়ে যেতে পারে। তাই অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য একদিকে যেমন প্রয়োজন শারীরিক সুস্থতা তেমনি প্রয়োজন মানসিক সুস্থতাও।